নকল ও ভেজাল ওষুধের অপব্যবসা বন্ধে দেশের সবকটি জেলায় ‘অ্যাকশন’ কমিটি পুনর্গঠিত হয়েছে। প্রত্যেক জেলার জেলা প্রশাসককে (ডিসি) সভাপতি ও ড্রাগ সুপারকে সদস্যসচিব করে গঠিত ৭ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটির নাম রাখা হয়েছে ‘জেলা ওষুধের অনিয়ম প্রতিরোধ সংক্রান্ত অ্যাকশন কমিটি।’
কমিটিতে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপ-পরিচালক (পরিবার পরিকল্পনা) ও জেলা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি বা মহাসচিব রয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, অ্যাকশন কমিটির কার্যপরিধিও নির্ধারণ করে দেয়া হয়। কার্যপরিধি অনুযায়ী কমিটি নিজ নিজ জেলার আওতাধীন এলাকায় লাইসেন্সবিহীন ওষুধের দোকান এবং নকল, ভেজাল ও অবৈধ ওষুধ প্রস্তুতকারী, বিক্রয়কারী ও সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার ব্যবস্থা করবে এবং ওষুধ আইন ১৯৪০, ওষুধ অধ্যাদেশ ১৯৮২ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ অনুযায়ী অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
প্রতিমাসে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে মন্ত্রণালয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন পেশ করবে কমিটি। প্রতিমাসে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার তথ্য-উপাত্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কাছেও পাঠানো হবে। কমিটি প্রতি দুই মাসে একবার সভা করবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনস্বাস্থ্য শাখা-১ শাখার উপসচিব গৌতম কুমার অনবিলম্বে কমিটি কার্যকর করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সময়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর মোবাইল কোর্ট চালিয়ে ২৭ কোটি টাকার নকল, ভেজাল ও আমদানি নিষিদ্ধ অবৈধ ওষুধ জব্দ করে ।
অধিদফতরের ২০১৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে ২৭৫টি অ্যালোপ্যাথিক, ২৬৬টি ইউনানি, ২০৫টি আয়ুর্বেদিক, ৭৯টি হোমিওপ্যাথিক ও ৩২টি হারবাল ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। লাইসেন্সপ্রাপ্ত ফার্মেসীর সংখ্যা ১ লাখ ১৫ হাজার ৪শ ৩৯টি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের শীর্ষ মহল থেকে নকল ও ভেজাল ওষুধের অপবাণিজ্য যেকোন মূল্যে বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নীতিনির্ধারকরা বলছেন, বাংলাদেশের প্রথম সারির ওষুধ কোম্পানিগুলো শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছে। কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ নকল করে রাজধানীসহ সারাদেশের বাজারে বিক্রি করছে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের ড্রাগ সুপার এস এম সাবরিনা ইয়াসমিন জানান, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কর্মকর্তারা ২০১৫ সালে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ড্রাগ কোর্টে ২৭টি ও ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ছয়টি মামলা করেন। ওই বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ২শ ৩৫টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে প্রায় তিন কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। ৩১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান, ১২টি কারখানা সিলগালা, ৪৫টি ফার্মেসি বন্ধ, দুটি গোডাউন সিলগালা ও ২২ কোটি ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫শ টাকার অবৈধ ওষুধ জব্দ করা হয়।
২০১৬ সালের প্রথম তিনমাসে ড্রাগ কোর্টে ৯টি, ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টে ১০টি মামলা করা হয়। এ সময়ে ৪শ ৪৬টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১ কোটি ৩৭ লাখ ১২ হাজার ৫শ টাকা জরিমানা করা হয়। দুটি ফার্মেসি সিলগালা করা হয়।
সুত্র জাগো নিউজ
পাঠকের মতামত